অসামান্যা এক বাঙালি বিজ্ঞানী কৃষ্ণকামিনী রোহাতগি মুখার্জী — ড. উৎপল অধিকারী | Bijnan-O-Bijnani

Sayantani Banerjee
3 min readJan 1, 2021

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।

কৃষ্ণকামিনী রোহাতগি মুখার্জি (Krishna Kamini Rohatgi-Mukherjee) বাঙালী বিজ্ঞান মহাকাশের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। ইনি তিলোত্তমা কলকাতার এক মহীয়সী নারী। এই শহরের এক বিশিষ্ট শিল্পপতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

অর্থের বৈভব কখনোই তাঁকে সারস্বত সাধনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখেনি। আজন্ম প্রতিভাময়ী কৃষ্ণকামিনী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিলেত যান।

বিদেশে কৃষ্ণকামিনীর গবেষণার বিষয়

সেখানে বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক বাওয়েন এর অধীনে গবেষণা শুরু করেন এবং 1952 সালে তিনি ডি. ফিল ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্রটি ছিল অতিশয় জটিল। কার্বন টেট্রাক্লোরাইড নামক এক জৈব যৌগে অ্যানথ্রাক্সিন দ্রবীভূত করে তার আলোক বিক্রিয়া সংক্রান্ত গবেষণা করেন এবং তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। সেখান থেকে আলোক আবেশিত ইলেকট্রন স্থানান্তর সম্পর্কে বিস্তর তথ্য পাওয়া যায়। এই সংক্রান্ত পরীক্ষা তাঁ‌‌কে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়।

দেশে ফিরে কৃষ্ণকামিনী রোহাতগির গবেষণার বিষয় ও অন্যান্য কাজ

তারপর দেশে ফিরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফুল্লচন্দ্র রায় ফেলো নির্বাচিত হন, সময়কাল 1954 থেকে 1957। প্রায় ওই সময়কালে তিনি ‘ফুলব্রাইট বৃত্তি’ লাভ করে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যান পোস্ট ডক্টরাল গবেষক হিসাবে কাজ করতে।

দেশে ফিরে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালযে অধ্যাপক হিসাবে নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি তাঁর অধ্যাপনা জীবন শেষ করেন। অর্থাৎ এক সুদীর্ঘ সময় জুড়ে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

তিনি কেবল একজন কৃতী গবেষক ছিলেন তাই নয়, তিনি ছিলেন ছাত্রদরদী অত্যন্ত কৃতী এক অধ্যাপকও। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অতিথি অধ্যাপক হিসাবে এবং সেই সাথে গবেষক হিসাবেও নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত গবেষণাগারটি আলোক-রসায়ন বিজ্ঞানের এক বিশ্বমানের গবেষণাগার ছিল।

অসংখ্য রত্ন তাঁর অধীনে গবেষণা করে বিজ্ঞানের এই ক্ষেত্রটিকে সুউচ্চ মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন। পরিণত বয়সে তিনি তাঁর জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নেন বিখ্যাত অধ্যাপক সুশীলকুমার মুখার্জি মহাশয়কে। তাঁর রচিত ‘ফান্ডামেন্টালস অফ ফটোকেমিস্ট্রি’ বইটি রসায়নের এক অমূল্য সম্পদ।

শ্রেষ্ঠ কাজ

তাঁর শ্রেষ্ঠ কাজগুলির মধ্যে একটি হলো উত্তেজিত ইলেকট্রন কণার আন্তঃক্রিয়ায় রঞ্জক সামগ্রীর অববর্ণায়ন সংক্রান্ত গবেষণা। এই সংক্রান্ত গবেষণা তাঁকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে যায় বলে বিজ্ঞানীমহল মনে করেন।

এছাড়াও আলোকতড়িৎ রসায়ন, অণুর আলোক ভৌতধর্ম ও সৌরশক্তির আলোক রাসায়নিক পরিবর্তন ও তার সংরক্ষণ ইত্যাদির ওপর তাঁর গবেষণা ছিল অতি উচ্চমানের।

তাঁর অন্যান্য কৃতীর মধ্যে ছিল, তিনি ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ কেমিক্যাল এডুকেশন’ এর সম্পাদক মন্ডলীর সদস্যা, ‘ইন্টারন্যাশনাল ডি ফটোবায়োলজি’ কমিটির সদস্যা ইত্যাদি। ভারতবর্ষে সি. এস. আই. আর এর বিভিন্ন কমিটিতে নানান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন সারা জীবন ধরে।

1985–1988 সালে তিনি ‘অ্যাসোসিয়েশন ইন্টারন্যাশনাল ডি ফটোবায়োলজি’ র সভাপতি ছিলেন। এরপূর্বে 1979 সালে ভারতবর্ষে ইউজিসির ন্যাশনাল লেকচারার নির্বাচিত হন।

1984–1985 সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের রসায়ন বিভাগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। 1988 সালে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ফটোবায়োলজি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিতও হয়েছিলেন।

1991 সালে তিনি স্যার সি.ভি রমন পুরস্কার এবং আর.পি মিত্র লেকচারশিপে মনোনীত হন। ‘ইন্ডিয়ান ফটোবায়োলজি সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি।

1979–81 সাল পর্যন্ত ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটির সহ‌‌‌:সভাপতি ছিলেন, তাছাড়াও এশিয়াটিক সোসাইটি, ওয়েস্ট বেঙ্গল একাডেমি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সম্মানিত সদস্যা ছিলেন। সারা জীবনে বহুবৃত্তি ও সম্মান পেয়েছেন। এসব কিছুর পরেও মাটির সাথে তাঁর যোগাযোগ ছিল আমৃত্যু। তাই সকল ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী ইত্যাদির মনে দীর্ঘকালীন এক ছাপ তিনি রেখে যেতে পেরেছিলেন।

জীবনাবসান

2009 সালের 31শে ডিসেম্বর তিনি তাঁর কর্মময় এবং বর্ণময় জীবন ছেড়ে চিরশান্তির দেশে গমন করেন। বাঙালি এই বিজ্ঞানীর জ্যোতির্ময় শিখা কখনোই নির্বাপিত হবে না, এই আশা করা যায়।

লেখক পরিচিতিঃ-

ড. উৎপল অধিকারী

Assistant teacher
Ajhapur High School
Ajhapur, Jamalpur, Purba Burdwan, W.B

Originally published at https://bijnan-o-bijnani.co.in on January 1, 2021.

--

--

Sayantani Banerjee

A designer by passion, a writer by choice, a digital marketer by profession